মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : ব্রেক্সিট পরবর্তী শ্রমিক বা কর্মী নিয়োগের নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বৃটেন। এর অধীনে স্বল্প দক্ষ শ্রমিকদের আর কোনো ভিসা দেবে না তারা। এই নিয়ম ইউরোপ এবং ইউরোপের বাইরে সব জায়গার জন্য একই হবে। বৃটিশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চাকরিদাতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, ইউরোপের সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে স্টাফদের রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে, অটোমেশন প্রযুক্তির উন্নয়ন করতে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে ৩১ শে ডিসেম্বর ইউরোপ এবং বৃটেনের মধ্যে অবাধ চলাচল বন্ধ হয়েছে। এরপর ইউরোপীয় এবং ইউরোপের বাইরের নাগরিক, যারা বৃটেন যাবেন তাদের সঙ্গে সমান আচরণ করা হবে। অর্থাৎ তারা একই রকম সুযোগ সুবিধা পাবেন।
এর জবাবে বিরোধী লেবার দল এমন পরিস্থিতিকে বৈরি পরিবেশ বলে আখ্যায়িত করেছে। তারা বলেছে, এমন নীতির ফলে শ্রমিক বা কর্মীদের আকৃষ্ট করা কঠিন হবে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, নতুন এই ব্যবস্থায় বৃটেনে আসবে মেধাবী ও উন্নত মানুষ। সরকার বলেছে, বৃটেনে মোট অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করেছে তারা। তাই পয়েন্ট ভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থা চালু করতে চায় তারা। এটা তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টো ছিল।
নতুন নিয়মের অধীনে বিদেশী যেসব শ্রমিক বা কর্মী বৃটেনে যেতে চান তাকে বা তাদেরকে ভালভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে সক্ষম হতে হবে। অনুমোদিত একজন স্পন্সরের সঙ্গে দক্ষ কাজের প্রস্তাব থাকতে হবে। এসব ক্রাইটেরিয়া সম্পন্ন করলে তাদেরকে ৫০ পয়েন্ট দেয়া হবে। তবে বৃটেনে কাজ করতে হবে একজন অভিবাসীকে সব মিলিয়ে মোট ৭০ পয়েন্ট পেতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতার পয়েন্ট, প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো থেকে পয়েন্ট সহ বিভিন্ন ইস্যু। কমপক্ষে মোট ৭০ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে এভাবে- চাকরির প্রস্তাব ২০ পয়েন্ট। দক্ষতা সহ যথাযথ চাকরিতে ২০ পয়েন্ট। ইংরেজি কথা বলায় ২০ পয়েন্ট। ২২ হাজার পাউন্ড বেতনে কোনো পয়েন্ট নেই। পিএইচডিতে ২০ পয়েন্ট।
সরকার বলেছে, তারা স্বল্প দক্ষ শ্রমিকদের বৃটেনে যাওয়ার পথ সংকোচন করবে। ইউরোপের দেশ এবং বৃটেনের মধ্যে অবাধ চলাচল বন্ধ করতে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অভিযোজন ও সমন্বয় করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পক্ষান্তরে সরকার বলেছে, এরই মধ্যে বৃটেনে অব্যাহতভাবে অবস্থান করার জন্য আবেদন করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৩২ লাখ নাগরিক। তারা বৃটেনের শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণে সাহায্য করতে পারেন। সরকার কৃষিখাতে মৌসুমি শ্রমিকদের সংখ্যা চারগুন বাড়িয়ে ১০ হাজার করার কথা বলেছে। এর অধীনে প্রতি বছর বৃটেনে যেতে পারবেন ২০ হাজার তরুণ বা যুবক। সরকারের এসব প্রস্তোবকে স্বাগত জানিয়েছে সিবিআই। তারা বলেছে, কিছু প্রতিষ্ঠান বিস্মিত হবে এই জন্য যে, তারা তাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান চালাতে কিভাবে লোক নিয়োগ করবেন। অন্যদিকে প্রস্তাবের বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠানগুলো জানে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায় লবি গ্রুপের মহপরিচালক ক্যালোনি ফেয়ারবেয়ার্ন।
তবে সরকারের প্রস্তাব বা পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রয়েল কলেজ অব নার্সিং। তারা বলেছে, বৃটিশ জনগণের স্বাস্থ্য ও যতœ নেয়ার জন্য যে পরিমাণ মানুষের প্রয়োজন এই প্রস্তাব তা পূরণ করতে পারবে না। ইউনিসনের সহকারী সাধারণ সম্পাদক ক্রিস্টিনা ম্যাকানিয়া বলেছেন, এই প্রস্তাব ‘কেয়ার সেক্টরে’ বা সেবাখাতে চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে। ওদিকে স্বল্প দক্ষ কর্মীদের জন্য কোনো বিধান না রাখার কারণে এ প্রস্তাবকে কা-জ্ঞান বলে আখ্যায়িত করেছে ইউকে হোমকেয়ার এসোসিয়েশন। এর একজন মুখপাত্র বলেছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তারা ভীষণভাবে হতাশাগ্রস্ত। এমন প্রস্তাবে সিরিয়াস উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ন্যাশনাল ফার্মার্স ইউনিয়ন সভাপতি মিনেত্তে ব্যাটার্স। বলেছেন, এ পরিকল্পনায় বৃটিশ খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দেয়া হয় নি। অন্যদিকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফুড অ্যান্ড ড্রিংক ফেডারেশন।
নতুন পরিকল্পনার অধীনে সব অভিবাসী তাদের অনির্দিষ্ট ছুটি থেকে বৃটেনে থেকে যাওয়ার অনুমতি যদি পান এবং তারপর পাঁচ বছর অতিবাহিত হয় তাহলে সব অভিবাসীই আয় সংক্রান্ত সুযোগ সুবিধা পাবেন। বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় যেসব ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক আছেন তারা বৃটেনে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। তবে ইউরোপের বাইরের অভিবাসীরা এই সুযোগ সুবিধা পাওয়া যোগ্য তখনই, যখন তারা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাবেন। এটা হতে হলে এসব নাগরিককে বৃটেনে বৈধভাবে কমপক্ষে ৫ বছর বসবাস করতে হয়।
যেসব দক্ষ শ্রমিক বৃটেনে যেতে চান তাদের বেতন মাইগ্রেশন এডভাইজরি কমিটির সুপারিশে ৩০ হাজার পাউন্ড থেকে কমিয়ে ২৫ হাজার ৬০০ পাউন্ড হতে হবে বলে ধরা হয়েছে। ওই পরিষদের সুপারিশে বলা হয়েছে, বেতন কাঠামো এভাবে কমিয়ে আনাতে শিক্ষক এবং স্বাস্থ্যখাতে দক্ষ স্টাফ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া আবেদনকারী বাণিজ্যিক দিক থেকে পয়েন্ট পেতে পারেন। যারা ২৫ হাজার ৬০০ পাউন্ড থেকে কম কিন্তু ২০ হাজার ৪৮০ পাউন্ডের বেশি আয় করছেন তারা ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে যদি তাদের পেশাদারিত্বের বিশেষ খাতে শ্রমিকের ঘাটতি থাকে বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিএইডি করেন। ‘মর্টেজ অকুপেশনে’র একটি তালিকা পর্যালোচনার অধীনে রাখবে মাইগ্রেশন এডভাইজরি কমিটি।